টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ২০২৩ বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ফরম্যাটেও আর দেখা যায়নি টাইগার অলরাউন্ডারকে। সবাই যখন তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি দেখে ফেলেছেন, তখন সাকিব নিজেই জানালেন বাংলাদেশের হয়ে আরও এক বা দুই বছর খেলতে চান। তবে এজন্য সরকারের উপরের মহল থেকে সহায়তা ও ইতিবাচক সাড়া কামনা করেছেন তিনি।
সাকিব বাংলাদেশের হয়ে সর্বশেষ খেলেছেন গত বছর সেপ্টেম্বরে ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের সেই ভারত সফরে তিনি জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি আর খেলবেন না। পাশাপাশি অক্টোবরে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেট ছাড়ারও ঘোষণা দেন এবং ওয়ানডেতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত খেলার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন সাকিব।
কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বিগত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাকিবের একটি ইচ্ছাও পূরণ হয়নি। তখন সাকিবকে জানানো হয়েছিল, নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে তিনি দেশে না এলেই ভালো হবে। তাই সাকিবও আর দেশে আসেননি। কিন্তু দেশে আসতে না পারলেও লাল-সবুজের জার্সিতে খেলার স্বপ্ন এখনো মনে পুষে রেখেছেন ৩৮ বছর বয়সী এই স্পিন অলরাউন্ডার।
সম্প্রতি দেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেন, ‘আমি এখনো চাই, বাংলাদেশের হয়ে খেলেই ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে। যদি কখনো সুযোগ হয়, তাহলে ১-২টি সিরিজ কিংবা আরো ১ বছর খেলার পরিকল্পনা করবো। আমার সবথেকে বড় ইচ্ছে হলো, আমার দেশের হয়ে খেলা এবং সেজন্য আমি আমার সবটুকু বিসর্জন দিতেও রাজী আছি।’
টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়ার আগে সাকিব বুঝতে পারছিলেন, এত মানসিক চাপ নিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হচ্ছে। তবে দেশে বিদায়ী টেস্ট খেলতে কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অংশ হতে আলোচনা থামাননি। এমনকি কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার সাথেও। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কখন টের পেলেন বাংলাদেশের হয়ে খেলার সুযোগ আর নেই?
সাকিবের উত্তর, ‘যখন বুঝলাম এত চাপ নিয়ে খেলতে পারব না, তখনই মনে হয়েছে শেষ। ব্যাপারটা এমন নয় যে আমি আমার দেশের হয়ে খেলতে চাই না—আমি এখনো বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই, আর এই ইচ্ছা সব সময়ই থাকবে। এ নিয়ে বিসিবি সভাপতি থেকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা—সবার সঙ্গেই যোগাযোগ করেছি।’
দেশে ফেরার বিষয়ে বিসিবি সাহায্য করতে পারেনি বলে সাকিবের কোনো অভিযোগ নেই। তবে সাকিব মনে করেন, বাংলাদেশের হয়ে খেলার সুযোগটা তার প্রাপ্য। এ নিয়ে সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছেন, ‘আপনি আমাকে গত ১৮ বছরের ক্রিকেট দিয়ে বিচার করবেন নাকি ছয় মাস দিয়ে বিচার করবেন সেটা আপনার ওপর। তবে আমি মনে করি আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলাটা ডিজার্ব করি। বেশীরভাগ মানুষ চায় আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলেই অবসর নিই। আমিও বিশ্বাস করি যে আর এক বা দুই বছর আমি খেলতে পারব। এই ইচ্ছে পূরণের জন্যই আমি কাজ করছি এবং সবটুকু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ক্রীড়া উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা এবং বোর্ড সভাপতির সঙ্গে কথা বলছি।’
গত জুলাইতে দেশে যখন তৎকালীন সরকার গণহত্যা চালাচ্ছিল, তখন কানাডায় পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভ্রমণে বের হতে দেখা যায় সাকিবকে। দেশের ছাত্ররা যখন রাজপথে তাজা রক্ত ঝরাচ্ছিল, তখন সাকিবের সহধর্মিণীর ফেসবুক থেকে ভাইরাল হয় এমন ছবি। তখন বেশ খোশমেজাজে সময় কাটালেও বর্তমানে তা নিয়ে আফসোস করছেন সাকিব। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন তিনি। ভুল স্বীকার করে নিয়ে সেটির দায়ভারও নিচ্ছেন সাকিব। গতবারের সরকারের সংসদ সদস্য এবং ক্রিকেটার হিসেবে কাজটি অনুচিত ছিল বলেই ভাবনা সাকিবের।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি তখন বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে ছিলাম। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি) খেলতে গেলাম, তারপর কানাডায়। ছবিটি কানাডায় তোলা। আমি নিজে এটি পোস্ট করিনি। তবুও, আমি এর দায়ভার নিচ্ছি। এটা একটা পূর্বপরিকল্পিত পারিবারিক ভ্রমণ ছিল। পাবলিক ফিগার হিসেবে আমার আরও সচেতন থাকা উচিৎ ছিল। আমি এটা মানি। তবে আমার মনোযোগ সবসময় ক্রিকেটেই ছিল। এমপি হওয়ার আগে কিংবা পরেও। আমাকে কখনও রাজনীতিতে মাথা ঘামাতে বলা হয়নি। সবসময় বলা হয়েছে- ক্রিকেট খেলো।’
খুলনা গেজেট/জেএম